ইসলাম ডেস্ক ॥ হজরত ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেটপুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে।’ -আল আদাবুল মুফরাদ: ১১২
অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, যে প্রতিবেশীর প্রয়োজন পূরণ করবে আল্লাহতায়ালা তার প্রয়োজন পূরণ করবেন ও সহায় হবেন। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন। -সহিহ বোখারি: ২৪৪২
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, এমন অনেক প্রতিবেশী রয়েছেন; যাদের দেখে বোঝার উপায় নেই যে- তারা অভাবে দিন কাটাচ্ছেন। তারা কখনও অন্যের কাছে কিছু চায় না। কোরআনে কারিমে তাদেরকে ‘মাহরূম’ বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সূরা যারিয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং তাদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও মাহরূমের (বঞ্চিতের) হক।’ -সূরা যারিয়াত: ১৯
বর্ণিত অবস্থায় আমাদের কর্তব্য হলো, নিজে থেকে তাদের খোঁজ-খবর রাখা এবং দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন পন্থা অবলম্বন করা, যাতে সে লজ্জা না পায়। এ জন্যইতো জাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে এটা বলে দেওয়া জরুরি নয় যে, আমি তোমাকে জাকাত দিচ্ছি; বরং ব্যক্তি জাকাতের যোগ্য কি-না এটুকু জেনে নেওয়াই যথেষ্ট।
ইসলাম প্রতিবেশীর সঙ্গে সর্বদা ভালো ব্যবহারের কথা বলে। কারণ, আখেরাতের প্রথম বাদী-বিবাদী হবে প্রতিবেশী। ইসলাম মনে করে, প্রতিবেশীর অধিকার নষ্ট করা বা তাকে কষ্ট দেওয়া অনেক বড় অন্যায়। কখনও দুনিয়াতেই এর সাজা পেতে হয় আর আখেরাতের পাকড়াও তো আছেই।
অর্থবল বা জনবল আছে বলে প্রতিবেশীর অধিকার নষ্ট করে পার পাওয়া যাবে এমনটি নয়। হ্যাঁ, দুনিয়ার আদালত থেকে হয়ত পার পাওয়া যাবে, কিন্তু আখেরাতের আদালত কোনোভাবেই পার পাওয়া সম্ভব নয়।
যেমন হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন প্রথম বাদী-বিবাদী হবে দুই প্রতিবেশী।’ -মুসনাদে আহমাদ: ১৭৩৭২
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়াকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামদেয়
ঈমানের দুর্বলতা বলে চিহ্নিত করেছেন। কোনো ব্যক্তি মুমিন আবার প্রতিবেশীকে কষ্টও দেয় তা ভাবা যায় না। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়! সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, সে কে হে আল্লাহর রাসূল? রাস্লূুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ -সহিহ বোখারি: ৬০১৬
আরেক হাদিসে এসেছে, ‘যে আল্লাহর প্রতি ইমান রাখে ও আখেরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন স্বীয় প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ -সহিহ বোখারি: ৬০১৮)
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়ার বিভিন্ন ধরন হতে পারে। যেমন, জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া, চলাফেরার ক্ষেত্রে দৃষ্টি অবনত না রাখা, প্রতিবেশীর বাসার সামনে ময়লা ফেলা, জোরে জোরে গান-বাজনা বাজানো, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় প্রতিবেশীর ঘুম বা বিশ্রামের ক্ষতি করা, প্রতিবেশীর চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া, গৃহপালিত পশুর মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি।
ইসলাম শুধু প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো ব্যবহারের কথাই বলেন, ইসলাম প্রতিবেশীর দোষ ঢেকে রাখার কথাও বলে।
পাশাপাশি থাকার কারণে একে অপরের ভালো-মন্দ অনেক কিছুই জানাজানি হয়। গোপন করতে চাইলেও অনেক কিছু গোপন করা যায় না। প্রতিবেশীর এসব বিষয় পরস্পরের জন্য আমানত। নিজের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণেই একে অপরের দোষ ঢেকে রাখা জরুরি।
মনে রাখতে হবে, একজন অন্যজনের দোষ প্রকাশ করে দিলে সেও এসনটা করবে। পক্ষান্তরে প্রতিবেশীর কোনো দোষ ঢেকে রাখলেদেয়
দোষ গোপন রাখবে। এমনকি এর উসিলায় হতে পারে আল্লাহতায়ালা এমন দোষও গোপন রাখবেন, যা প্রতিবেশীও জানে না।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে তার মুসলিম ভাইয়ের দোষ ঢেকে রাখে আল্লাহতায়ালাও কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।’ -সহিহ মুসলিম: ২৫৮০
Leave a Reply